চীনের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছেন ফা হিয়ান, হিউয়েন সাং ও অতীশ দীপঙ্কর প্রভৃতি মহান ব্যক্তিত্ব। বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চীনে গিয়েছিল। পরে ভারতে বৌদ্ধদের সংখ্যা ক্রমশ কমে গেলেও, চীন ও তিব্বতে এই ধর্ম বিকাশ লাভ করে।
চীন ও তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশে ভারতীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্তরক্ষিত ও অতীশ দীপঙ্কর আজকের দালাই লামা প্রথার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে অ-তিব্বতীয় ভাষায় প্রথম বই রচনা করেন শরৎচন্দ্র দাস।
প্রায় দেড়শ বছর আগে চট্টগ্রামের সন্তান শরৎচন্দ্র দাস ইংরেজ সরকারের গুপ্তচর হিসেবে নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিব্বতের গিয়াংজে প্রদেশের ফাল ধাপন নামের এক ব্যক্তি তাকে আতিথেয়তা দেন। শরৎচন্দ্র দাস সেখানে কয়েক বছর অবস্থান করেন এবং জানতে পারেন কীভাবে বাংলার বৌদ্ধ দার্শনিকরা তিব্বতে লামা প্রথার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিব্বতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় নিমগ্ন ছিলেন। এমনকি নিজের বাড়ির নামও তিনি তিব্বতের রাজধানী লাশার নামানুসারে রাখেন—“লাশা ভিলা”।
তার এই “লাশা ভিলা” বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত (অথবা কুখ্যাত) থিওসোফিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হেনরি স্টিল ওলকট থেকে শুরু করে জাপানের ইকাই কাওয়াগুচি এবং ইংরেজ গুপ্তচরদের বৈঠক বসতো।
বাংলাদেশ থেকে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বতে নিয়ে যেতে প্রাণ দিয়েছিলেন তিব্বতের রাজা। হাজার বছর পর শরৎচন্দ্র দাসের মাধ্যমে অতীশের স্মৃতি, দর্শন এবং পাহাড়পুর ও নালন্দার ইতিহাস পুনরায় তিব্বত থেকে বাংলায় ফিরে আসে। কিন্তু এই ইতিহাস ফেরানোর প্রক্রিয়াও ছিল রক্তপাতহীন নয়।
শরৎচন্দ্র দাসের গুপ্তচরবৃত্তির খবর জানাজানি হলে নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতের সরকার ফাল ধাপন ও তার স্ত্রীকে আজীবন অন্ধকার কক্ষে বন্দি করে রাখে। তাদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাড়ির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চোখ তুলে ফেলা হয়, কারও দুটি হাত, কারও দুটি পা কেটে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে তাদের কেউই প্রাণে বাঁচতে পারেননি।
একশ ত্রিশ বছর পর শরৎচন্দ্র দাসের সেই ঐতিহাসিক বইটি আবার বাংলায় ফিরিয়ে এনেছে বিপ্রতীপ প্রকাশনা।